অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়

ভারতপিডিয়া থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

অঘোরনাথ  চট্টোপাধ্যায়  (১৮৫১-১৯১৫) একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ এবং সমাজ সংস্কারক ছিলেন [১]। ডি.এসসি (বিজ্ঞানের ডক্টর) ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ভারতীয়, তিনি পরে হায়দ্রাবাদের নিজাম কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হন[২]। প্রখ্যাত ভারতীয় রাজনৈতিক কর্মী ও কবি  সরোজিনী নাইডু ছিলেন তাঁর বড়ো মেয়ে।

Aghorenath Chattopadhyay D.Sc অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়
জন্ম1851-10-31
ব্রাহ্মণগাঁ বিক্রমপূর, ( অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু1915-01-28
সন্তান8; সরোজিনী; বীরেন্দ্রনাথ; মৃণালিনী; ভূপেন্দ্রনাথ; সুনলিনী; রণেন্দ্রনাথ; হরীন্দ্রনাথ; সুহাসিনী
পিতা-মাতা
  • রামচরণ চট্টোপাধ্যায় (পিতা)

প্রারম্ভিক জীবন

অঘোরনাথ  বিক্রমপুরে,  (অধুনা বাংলাদেশে), সংস্কৃত পণ্ডিতের বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করার পরে, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছিলেন। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পড়াশুনার জন্য গিলক্রিস্ট বৃত্তি পান । তিনি  পড়াশুনায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন এবং হোপ্ পুরস্কার এবং বাক্সটার বৃত্তি লাভ করেছিলেন [৩]

Golden Threshold: Aghorenath Chattopadhyay's house in Abids, Hyderabad.

কর্মজীবন

ভারতে ফিরে এসে তিনি হায়দরাবাদ রাজ্যের নিজামের কাছ থেকে সেখানে শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল দিয়ে শুরু করেছিলেন। তিনি হায়দ্রাবাদ কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীকালে নিজাম কলেজ হয়ে যায়। পরে তিনি ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হিসাবে মহিলাদের জন্য একটি কলেজ চালু করার প্রচেষ্টাও শুরু করেছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে প্রচলিত   বিশেষ বিবাহ আইন (১৮৭২) হায়দ্রাবাদ রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।  হায়দ্রাবাদের বুদ্ধিজীবীদের সংগে তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাহিত্যের বিষয়ে বিতর্ক করতেন। এই সময়ে অঘোরনাথ রাজনীতিতেও জড়িত হন [৪]

চন্দা রেল প্রকল্পের বিষয়ে নিজামের সাথে তাঁর মতভেদ ছিল এবং অসন্তুষ্ট নিজাম তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এবং 20 মে 1883-তে তাকে হায়দরাবাদ থেকে নির্বাসিত করা হয়[৫]। তবে কয়েক বছর পরে তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। এবং নিজামই পরবর্তীকালে সরোজিনীকে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার জন্য বৃত্তি প্রদান করেছিলেন[৬],[৭]

হায়দরাবাদে ফিরে অঘোরনাথ তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা অব্যাহত রেখেছিলেন । তাই তাড়াতাড়ি অবসর নিযে কলকাতায় স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী বরদা সুন্দরী দেবী কলকাতার লাভলক স্ট্রিটে বাস করতেন[৮]

ব্যক্তিগত জীবন

অ্যাডিনবার যাওয়ার আগে অঘোরনাথ, ভারদা সুন্দরী দেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারদা সুন্দরী, কেশবচন্দ্র সেন দ্বারা পরিচালিত  শিক্ষাকেন্দ্র ভারত আশ্রমে ছাত্রী ছিলেন।   1858 সালে অধোরনাথ পত্নী সমেত হায়দরাবাদে এসেছিলেন। এই দম্পতির আট ছেলেমেয়েদের সরোজিনী ছিলেন জ্যেষ্ঠ কন্যা। সরোজিনী নাইডু তাঁর পিতাকে অবিচ্ছিন্ন কৌতূহলী এবং বুদ্ধিজীবী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এই কৌতূহলই তাকে সোনার রেসিপির সন্ধানে আল্কেমিস্টে পরিণত করেছিল[৯]। ১৯০৫ সালে সরোজিনীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "গোল্ডেন থ্রেশহোল্ড" প্রকাশিত হবার পর থেকে হায়দরাবাদের বাডির নাম ও গোল্ডন  থ্রেশহোল্ড  হয। দ্বিতীয় মেয়ে মৃণালিনী কেমব্রিজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন এবং পরে লাহোরের গঙ্গারাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হন, যা বর্তমানে লাহোর কলেজ ফর মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত [১০]। তৃতীয় কন্যা সুনালিনী ছিলেন একজন কথক নৃত্যশিল্পী । কনিষ্ঠ কন্যা সুহাসিনী একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম মহিলা সদস্য ছিলেন। তিনি এ.সি.এন. নাম্বিয়ার কে বিবাহ করেন কিন্তু পরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে[১১]

অঘোরনাথের বড়ো ছেলে বীরেন্দ্রনাথ বামপন্থী ছিলেন এবং তার নাম বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ ক্রাইম রেজিস্টারে ছিল[১২],[১৩]। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ক্রিয়াকলাপের পক্ষে সমর্থন আদায় করে ইউরোপে সময় কাটিয়েছিলেন। মস্কোতে অবস্থানকালে তিনি স্তালিনের গ্রেট পার্জে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ১৯৩৭ সালের ২ সেপ্টেম্বরে তাকে মৃত্যুদন্ড দেযা হয়[১৪]। কনিষ্ঠ পুত্র হরিন্দ্রনাথ ছিলেন একজন কর্মী, কবি ও অভিনেতা। তিনি 1973 সালে ভারতীয় নাগরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন[১৫]

তথ্যসূত্র

  1. Bhukya, Bhangi (২০১৭)। History of Modern Telangana। Hyderabad: Orient Black Swan। পৃষ্ঠা 43। আইএসবিএন 9789386689887 
  2. "Aghorenath Chattopadhyay"edglobal.egnyte.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৭ 
  3. Rangarajan, Uttara (২০১৯-০৬-২০)। "Aghorenath Chattopadhyay-Uncover ED"uncover-Ed.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৭ 
  4. Ray, Prafulla Chandra (১৯৫৮)। Autobiography of a Bengali Chemist। Calcutta: Orient Book Company। পৃষ্ঠা 107। 
  5. Deb, HC (১৮৮৩-০৭-০৯)। "Railways(India) -The Nizam's Territory-Hyderabad and Chanda Railway(Hansard, 9 July 1883)"api.parliament.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৭ 
  6. Sengupta, Padmini (১৯৬৬)। Sarojini Naidu: A Biography। New York: Asia Publishing House। পৃষ্ঠা 27। 
  7. Akbar, Syed (২০১৯-০১-০৭)। "Nizam's kin pulls out 'firmans' showing last ruler's generosity"Timesofindia.indiatimers.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৭ 
  8. Sengupta, Padmini (১৯৬৬)। Sarojini Naidu: A biography। New York: Asia Publishing House। পৃষ্ঠা 11,17–18। 
  9. Sengupta, Padmini (১৯৬৬)। Sarojini Naidu: A Biography। New York: Asia Publishing House। পৃষ্ঠা 9। 
  10. Mohan, Chandra (২০১৫-১১-২৯)। "Acting on Nehru's lofty ideals"tribuneindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১১ 
  11. Ramdev, Darshan (২০১৭-০৪-১৪)। "There is no dignity left in politics now"deccanchronicle.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১১ 
  12. Ker, James Campbell (১৯৬০)। Political Trouble in India :1907-1917। Calcutta: S.Ghatack from India Editions। পৃষ্ঠা 181–2। 
  13. Barooah, Nirode (২০০৪)। Chatto: The Life and Times of an Anti-Imperialist in Europe। Oxford University Press। আইএসবিএন 9780195665475 
  14. Liebau, Heike। "Chattopadhyay, Virendranath"International Encyclopaedia of First World War(। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১১ 
  15. "Padma Awards"dashboard-padmaawards.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১১