জাহানারা আহমেদ

ভারতপিডিয়া থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
জাহানারা আহমেদ
জন্ম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাঅভিনেত্রী, নাট্যকার
কর্মজীবন১৯৬২-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীহেমায়েত উদ্দিন আহমেদ
সন্তানইকরাম আহমেদ (পুত্র)
আখতার আহমেদ (পুত্র)
ইমতিয়াজ আহমেদ (পুত্র)
পিতা-মাতানূরুল হাই ফজলুল হক (পিতা)
মালেকুন্নেসা খাতুন (মাতা)
পুরস্কারএকুশে পদক

জাহানারা আহমেদ হলেন একজন বাংলাদেশী মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেত্রী। তার অভিনীত কিছু জনপ্রিয় একক নাটক এবং ধারাবাহিক নাটক হল সকাল সন্ধ্যা, সংশপ্তক, শুকতারা, রামের সুমতি, পুরনো বাক্স, অসমাপ্ত কাহিনী, আমাদের সন্তানেরা, চোখের বালি এবং বেলা অবেলা। অভিনয়ের পাশাপাশি আহমেদ একজন নাট্যকার। তার রচিত নাটক বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। তিনি পঞ্চাশের অধিক নাটক রচনা করেন, যার বিষয়বস্তু ছিল নারীর ক্ষমতায়ণ, শিশুর সঠিক পরিচর্যা ও বিকাশ, জনসংখ্যা, এবং কৃষি।[১] বেতারে প্রচারিত তার রচিত জনপ্রিয় নাটকসমূহ হল বাসনা, বাঁধন, মোহ, দৃষ্টি, মা, ন্যায়দণ্ড, ছোবল, মৃত্তিকার আলিঙ্গন, অতিথি, এবং আনন্দধারা[২] নাট্যকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।[৩][৪]

প্রারম্ভিক জীবন

জাহানারা আহমেদ ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নূরুল হাই ফজলুল হক এবং মাতার নাম মালেকুন্নেসা খাতুন।[৫][৬]

কর্মজীবন

১৯৬২-১৯৭০: বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিষেক

জাহানারা ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেন[৭] সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান "জীবন্তিকা"র মাধ্যমে। এর কিছু দিন পর তিনি কাজী খালেক পরিচালিত একটি বেতার নাটকে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু হলে তিনি টেলিভিশন অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে ঘোষিকা হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে তিনি মমিনুল হক পরিচালিত একটি নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন।[২]

১৯৬৪ সালে তিনি ওবায়েদ-উল-হক পরিচালিত দুই দিগন্ত দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন।[৮] তিনি পারিবারিক কারণে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় চালিয়ে যান নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "যখন আমি চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছিলাম, তখন আমার সন্তানেরা বড় হচ্ছিল। আমি চাইনি তারা আমাকে নায়িকা চরিত্রে আমার নায়কদের সাথে প্রণয়মূলক সংলাপে বা তাদের সাথে নাচতে ও গাইতে দেখুক। তাই আমি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করাকে বেচে নিলাম।"[২] ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শুরু করেন। ষাটের দশকের শেষের দিকে তার অভিনীত নাটকগুলো হল দৃষ্টিপাত এবং ঘরোয়া[১][৯]

১৯৭০-এর দশক

সত্তরের দশকের শুরুতে তিনি শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত উপন্যাস অবলম্বনে সংশপ্তক নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলেও চার পর্ব প্রচারের পর এই নাটক নির্মাণ ও সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সকাল সন্ধ্যা, আপন জন, দানব[৬]

১৯৮০-এর দশক: নাটকে শক্ত অবস্থান

আহমেদ ১৯৮৩ সালে নতুন বউ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। আশির দশকের শেষের দিকে তিনি কুহেলিকা নাটকে জমিদার পত্নী চরিত্রে অভিনয় করেন। এই নাটকে তার ভৃত্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আলতাফ। আলতাফ এই নাটকের শেষ দৃশ্য করার পূর্বে হঠাৎ মারা যান। আমজাদ হোসেন পরিচালিত হাস্যরসাত্মক ধারাবাহিক নাটক জব্বার আলীতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।[২] তার অভিনীত কিছু জনপ্রিয় একক নাটক এবং ধারাবাহিক নাটক হল সকাল সন্ধ্যা, শুকতারা, রামের সুমতি, পুরনো বাক্স, অসমাপ্ত কাহিনী, আমাদের সন্তানেরা, চোখের বালি এবং বেলা অবেলা[১][২]

১৯৯০-এর দশক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি চাকর (১৯৯২) এবং কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩) ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি নাট্যকার হিসেবেও আবির্ভূত হন। তার রচিত নাটক বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত হতে থাকে। বেতারে প্রচারিত তার রচিত জনপ্রিয় নাটকসমূহ হল বাসনা, বাঁধন, মোহ, দৃষ্টি, মা, ন্যায়দণ্ড, ছোবল, মৃত্তিকার আলিঙ্গন, অতিথি, এবং আনন্দধারা[২]

২০১০-বর্তমান

আহমেদ লকেট নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। এই উপন্যাসে তিনটি গল্প ছিল। এর একটি গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় নাটক ছোবল। লায়লা হক নির্মিত নাটকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রতি শুক্রবারে প্রচারিত হত।[১] ২০১৬ সালের ইদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে আবুল হায়াত রচিত ও পরিচালিত বাবা তোমার হাতটা একটু ধরি নাটকে অভিনয় করেন। এতে আবুল হায়াত তার স্বামী (বাবা চরিত্রে) এবং শাহেদ শরীফ খান তার পুত্রের চরিত্রে অভিনয় করেন।[১০]

ব্যক্তিগত জীবন

জাহানারা আহমেদ হেমায়েত উদ্দিন আহমেদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের তিন পুত্র - ইকরাম আহমেদ, ড. আখতার আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ।[৬]

চলচ্চিত্রের তালিকা

চলচ্চিত্র
নাটক
  • পুরনো বাক্স
  • অসমাপ্ত কাহিনী
  • আমাদের সন্তানেরা
  • কুহেলিকা
  • চোখের বালি
  • সুপাত্রের সন্ধানে
  • সকাল সন্ধ্যা
  • সংসপ্তক
  • বেলা অবেলা
  • শুকতারা (১৯৮৮)
  • সৈকতে সারস (১৯৮৮)

সম্মাননা

আহমেদ নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।[১১][১২]

তথ্যসূত্র

  1. ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ "Jahanara Ahmed to be honoured with Ekushey Padak today"দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট (English ভাষায়)। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  2. ২.০ ২.১ ২.২ ২.৩ ২.৪ ২.৫ Deepita, Novera (১৬ নভেম্বর ২০০৫)। "Jahanara Ahmed's four decades on small screen"দ্য ডেইলি স্টার (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  3. "Ekushey Padak 2016 announced"নিউ এজ (English ভাষায়)। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  4. "একুশে পদক পেলেন জাহানারা আহমেদ"দৈনিক যুগান্তর। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "অভিনয়ের প্রকৃত মানুষ"দৈনিক ইত্তেফাক। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  6. ৬.০ ৬.১ ৬.২ "একুশে পদক প্রাপ্তিতে তাদের অনুভূতি"দৈনিক মানবজমিন। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  7. "একুশে পদক পাচ্ছেন জাহানারা আহমেদ"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  8. "একুশে পদক পাচ্ছেন জাহানারা আহমেদ"দৈনিক জনকণ্ঠ। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. "একুশে পদক পাচ্ছেন জাহানারা আহমেদ"বণিকবার্তা। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. "Abul Hayat, Jahanara Ahmed, Shahed in Baba Tomar Hatta Ektu Dhori"দ্য ডেইলি নিউ নেশন (English ভাষায়)। ২৮ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  11. "16 honored with Ekushey Padak 2016"দৈনিক ইত্তেফাক (English ভাষায়)। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ১২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 
  12. "16 named for Ekushey Padak 2016"দৈনিক সমকাল (English ভাষায়)। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ২ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ