রুকনউদ্দীন কায়কাউস

ভারতপিডিয়া থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
রুকনউদ্দীন কায়কাউস
বাংলার স্বাধীন সুলতান
সুলতান-বিন-সুলতান, সুলতান-উস-সালাতিন
সিকান্দার-এ-সানি
রাজত্ব১২৯১ – ১৩০০
পূর্বসূরিনাসিরউদ্দিন বুগরা খান
উত্তরসূরিশামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ
পিতানাসিরউদ্দিন বুগরা খান

রুকনউদ্দীন কায়কাউস (ফার্সি: رکن‌الدین کیکاوس‎‎; রাজত্বকাল: ১২৯১–১৩০০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন বাংলার স্বাধীন সুলতান। ১২৯১ সালে তার পিতা নাসিরউদ্দিন বুগরা খান স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছেড়ে দিলে তিনি তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন।[১] বেশ কয়েকটি শিলালিপি এবং মুদ্রায় নিজেকে তিনি সুলতান-বিন-সুলতান (সুলতানের পুত্র সুলতান) এবং সুলতান-উস-সালাতিন (সুলতানদের সুলতান) হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।[২]

রাজত্ব

তাঁর রাজত্বকালে তিনি তাঁর রাজ্যকে লখনৌতি এবং বিহার –এই দুভাগে ভাগ করে দুই অঞ্চলের জন্য দুইজন দক্ষ শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের মধ্যে ইখতিয়ারউদ্দীন ফিরোজ ইতগিন কে বিহারের শাসক এবং শাহাবুদ্দীন জাফর খান বাহরাম ইতগিনকে লখনৌতির শাসক নিযুক্ত করেন। লখনৌতির গভর্নর জাফর খান ইতগিন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের সপ্তগ্রাম (সাতগাঁও) জয় করেছিলেন। তাঁর রাজ্য, উত্তরে দেবকোট, পশ্চিমে বিহার এবং দক্ষিণে বিস্তৃত ছিল সপ্তগ্রাম (সাতগাঁও) পর্যন্ত। তিনি একটি বিশাল রাজ্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন।[২]

রাজ্যবিস্তার

তার আমলের শিলালিপি এবং মুদ্রা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, সুলতান রুকনউদ্দিন কায়কাউস রাজ্যবিজয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজ্য সম্প্রসারিত করেছিলেন। তার আমলে প্রাপ্ত মুদ্রা থেকে ধারণা করা হয় তিনি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গে অনেকগুলো অভিযান চালিয়ে কিছু অঞ্চল দখল করে সেখানে নিজের মুদ্রা জারি করেছিলেন। তার রাজ্যের মূল অংশ পশ্চিমবঙ্গবিহার হলেও তার আমলের মুদ্রার বিস্তার থেকে প্রমাণ হয় যে, পূর্ববঙ্গের কিছু এলাকাও তাঁর অধীনে ছিল।[২]

আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতি আনুগত্য

সুলতান রুকনুদ্দিন কায়কাউস আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতি অনুগত ছিলেন। কারণ, তার রাজ্যাভিষেকের আগেই ১২৫৮ সালে হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করে তা ধ্বংস করে আব্বাসীয় খিলাফতের শেষ খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহকে হত্যা করলেও সুলতান রুকনুদ্দিন কায়কাউস তাঁর রাজকীয় মুদ্রায় খলিফার নাম উৎকীর্ণ করেছিলেন।

দিল্লির সাথে সম্পর্ক

খলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি সুলতান রুকনউদ্দিন কায়কাউসের বড় ভাই মুইজউদ্দিন কায়কোবাদ এবং ভাতুষ্পুত্র শামসউদ্দিন কায়ুমারসকে হত্যা করে দিল্লির সিংহাসনে বসায় সুলতান কায়কাউস দিল্লি সালতানাতকে অস্বীকার করতেন। তিনি খলজি বংশকে দিল্লি সালতানাতের শাসনকর্তা হিসেবে না মেনে শুধুমাত্র দখলদার হিসেবে ভাবতেন।

তারা সবসময় প্রকাশ করতে চাইতেন যে তারা খলজি বংশের কারও চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। তাই দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খলজি সিকান্দার-এ-সানি (দ্বিতীয় আলেকজান্ডার উপাধি) গ্রহণ করায় সুলতান কায়কাউসও এই উপাধি গ্রহণ করেন। এমনকি তার অধীনস্থ বিহার এবং লখনৌতির শাসনকর্তাদ্বয়ও একই উপাধি গ্রহণ করেন। মামলুক সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের বংশধর সুলতান কায়কাউস দিল্লি কাছ থেকে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখেন।

অন্যদিকে খলজি বংশের ২য় সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ এলাকা নিজের অধীনে নিলেও তিনি কায়কাউসের শাসিত অঞ্চলের দিকে নজর দেননি। তিনি মৌনভাবে কায়কাউস তথা বাংলার স্বাধীনতা মেনে নিয়েছিলেন।[২]

শিলালিপি ও মুদ্রা

ভারতের বিহারের মুঙ্গেরের মহেশ্বর লিপি (১২৯২-৯৩ সাল) ও লক্ষ্মীসরাই লিপি (১২৯৭ সাল), দিনাজপুর থেকে দেবকোট লিপি (১২৯৭ সাল), বগুড়া থেকে মহাস্থান লিপি (১৩০০ সাল) এবং হুগলি থেকে তাঁর ত্রিবেণী (১২৯৮ সাল) শিলালিপি পাওয়া গেছে। এছাড়াও  লখনৌতি টাকশালে তাঁর আমলের বিপুল পরমাণে মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে।[২]

শাসন অবসান

কায়কাউসের আমলের মুদ্রা ও শিলালিপি অনুসারে তার রাজত্বের অবসান ঘটে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে। তখন তাঁর মাত্র ৩০ বছর বয়স ছিল। তবে তার শাসন অবসানের কারণ জানা যায় নি। কারো কারো মতে তার কোনো পুত্র সন্তান ছিল না এবং এই অবস্থাতেই তিনি মারা যান। আবার কোন কোন গবেষকদের মতে তাকে ক্ষমতা থেকে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয়েছিল। তাঁর শাসন অবসানের মাধ্যমে দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজ বংশের চির অবসান ঘটে।[২]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. KingListsFarEast
  2. ২.০ ২.১ ২.২ ২.৩ ২.৪ ২.৫ আলী, মুহম্মদ আনসার। "রুকনউদ্দীন কায়কাউস"bn.banglapedia.orgবাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৮